সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ট্রেডার হতে হলে কি ভাবে শুরু করবেন?

প্রতিদিন কত শত স্বপ্ন নিয়ে, মানুষ বাংলাদেশ শেয়ার বাজারে নতুন প্রবেশ করে, আবার কত স্বপ্ন ভাঙা মানুষ এই বাজার থেকে বিদায় নেয় । খুব কম মানুষই পারে তার লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যেতে, আর তার চেয়েও কম মানুষ পারে তার লক্ষ্যকে অর্জন করতে।তাই এই মার্কেটে প্রবেশ করেই লাভ লসের হিসাব করলে হবে না,টিকে থাকার মত নিজেকে শক্তিশালী করে তুলতে হবে। যেহেতু প্রথম দিন মানুষ শূণ্য থেকে শুরু করে, তাই এই সংখ্যাটা নিয়েই শুরু করি। শূণ্যএই সংখ্যাটা একটি প্রবল সম্ভাবনাময় এবং আশা বাদী সংখ্যা, এই শূণ্যের মধ্যে সব সম্ভাবনা লুকিয়ে থাকে। সকল সফল ব্যক্তি এবং সব ব্যর্থ ব্যক্তির মধ্যে মিল কোথায় জানেন? দুইজনের একবারে উৎপত্তি স্থল শূন্য, তার পর কেউ পিছনে হেটেছে আবার কেউ সামনে হেটেছে,কেউবা পিছন থেকে হেটে সামনে এসেছে, ,কেউবা সামনে থেকে হেটে সামনে পিছনে এসেছে।কিন্তু একেবারে গোড়ায় শূণ্য ছিল দুই জনই।তাই আমার কাছে শূণ্য সবচেয়ে আশাবাদী সংখ্যা। একজন বিনিয়োগকারী যত টাকা দিয়েই শুরু করুক না কেন লস আর লাভের মামলায় সে থাকে শূণ্য । তাই অপনার প্রতিটি পরিকল্পনায় ঠিক করবে ,কোন দিকে আগাবেন।শূণ্য থেকে সামনে নাকি পিছনে? প্রথম বিনিয়োগের সময় কম বেশি সবাই ট্রেডার হতে চায়, তারপর দুই একটা ট্রেডের পর কোন এক ভুলের মাসুল দিতে গিয়ে পরিনত হয় লং ট্রাম ইনভেষ্টরে,ট্রেডার লং ট্রাম ইনভেষ্টর এবং ডে ট্রেডার এর মধ্যে পার্থক্য জেনে এবং তাদের ইনভেষ্টমেন্ট প্রনালী সম্পর্কে জেনে তার পর ঠিক করা উচিত আপনি কি হতে চান?সব জানার পরও যদি  ট্রেডার হতে চান ,তাহলে কি ভাবে শুরু করবেন তাই নিয়ে আজকের আলোচনা।
শেয়ার ট্রেডিং খুব সহজ কিছু নয়। এর জন্য একজন ট্রেডারকে প্রচুর পরিমাণে লেখা পড়া করতে হয়, কষ্ট করে জ্ঞান লাভ করতে হয় । প্রতিটা সময় নতুন কিছু শিখার আগ্রহ রাখতে হবে নির্দিষ্ট সময় রাখতে হবে লেখাপড়া করার জন্য, ট্রেড আওয়ারে ফ্রি থাকতে হবে বাজার ভাল ভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হয়। বাজার যেকোনো সময় তার চরিত্র পরিবর্তন করতে পারে সেই পরিবর্তন বুঝে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। ট্রেডিং করতে চাইলে প্রথম দিকে বিভিন্ন বিনিয়োগকারীর সাক্ষাৎকার শুনতে হবে, বিভিন্ন সেমিনারে যোগদান করতে হবে, টেকনিক্যাল এনালাইসিস ট্রেনিং নিতে হবে। শেয়ার বাজার বিষয়ে  ইন্টারনেটে/বাজারে প্রচুর ভিডিও, বই, ম্যাগাজিন পাওয়া যায় ফ্রি বা পেইড সেগুলা পড়তে হবে। অনেক সময় তা একা স্টাডি করা সম্ভব হয় না, কয়েকজন বন্ধু মিলে গ্রুপ স্টাডি করলে ভাল ফলাফল পাওয়া যায়। নুন্যতম ১ বছর লেখা পড়া করার পর যখন নিজের মধ্যে আত্ম বিশ্বাস তৈরি হবে তখন ব্রোকারেজ হাউজে বিও একাউন্ট ওপেন করে অল্প অল্প করে ট্রেড শুরু করতে হবে।আপনি যতই আর্টিকেল পড়েন বা যতই ভিডিও দেখেন পানিতে না নামা পর্যন্ত আপনি সাতার কাটা শিখতে পারবেন না।তেমনি বিগত এক বছরে যতই জ্ঞান লাভ করেন মূল ক্লাস শুরু হবে ব্রোকারেজ হাউজে বিও একাউন্ট ওপেন করার পর।
শুরুতে যখন আপনি অল্প অল্প করে শেয়ার কিনার অর্ডার দিবেন তখন হয়ত ব্রোকারেজ হাউজের ট্রেডার বা অনীহা প্রকাশ করবে আপনাকে নানা বুদ্ধি দিতে চাইবে, আপনি এইগুলা এভয়েট করবেন।এখন অ্যাপ এর যুগ নিজের বাই সেল নিজের হাতেই করা ভাল ।এতে করে অনেক দ্রুত অনেক কিছু শিখতে পারবেন।মনে রাখবেন ব্রোকারেজ হাউজের ট্রেডাররাই আপনার লস বা প্ল্যান নষ্ট করার অন্যতম কারিগর।
যেকোন কাজ বা ব্যবসা শুরু করার আগে আপনাকে কিছু নিয়মনীতি, কলা-কৌশল শিখতে হয়। তার জন্য শুরুর প্রথম ১-২বছর আপনাকে কোন রিটার্ন ছাড়াই কাজটি চালিয়ে যেতে হবে। সেই সময়টা কেবল টিকে থাকার জ্ঞান অর্জন করতে হয়। লার্নিং হলো একটি প্রসেস। নতুনদের জন্য বিশেষ পরামর্শ, শেয়ার মার্কেটে যুক্ত হওয়ার সাথে সাথে কোন রকম লাভের আশা ছাড়াই টিকে থাকার কৌশল আগে শেখার চেষ্টা করতে হবে। লেগে থাকতে পারলে সফলতা আসবেই।
বাজারে ট্রেড করা শুরু করলেই সাধারণত প্রথম দুই একটা ট্রেডে প্রফিট পাওয়া যায়। প্রফিট পেলেও মনে হয় যে আমি সব শিখে গেছি , নতুন করে শিখার আগ্রহটা নষ্ট হতে শুরু করে। মনে হবে আমি সব বুঝে গেছি ,আর তখনই জানবেন যে আপনার শেষ হওয়ার প্রথম পক্রিয়া শুরু হলো। আপনি ট্রেড শুরু করার আগে যা শিখেছিলেন তা ছিলো এক ধরনের শিক্ষা ট্রেড শুরু করার পর আপনি প্রাইমারী স্কুল থেকে সেকেন্ডারি স্কুলের শিক্ষা শুরু। তা দ্রুতই শিখতে হবে। বাজারে প্রবেশ করেই বেশিরভাগ চায় সেই দিনেই লাভ। দিনের মধ্যে তের বার পোর্টফলিও মুল্য কমলো না বাড়লো তা দেখতে থাকে। যারাই বারং বার পোর্টফলিও দেখতে থাকে একটা সময় সেটাই তাদের অভ্যাসে পরিণত হয়ে যায়, তারা লাভ ক্ষতি দেখতে দেখতে এতটাই ক্লান্ত হয়ে পরে যে, এরপর অল্প লাভ হলেই ধৈর্য ধরতে পারে না। সেই শেয়ার বিক্রি করে দেয়। মনে মনে বলে যাক কিছুতো লাভ হলো। কয়েকদিন পর যখন ঐ শেয়ার আরও বাড়ছে দেখে বলবে আমার কেনাটাই ঠিক ছিলো, আমি অনেক কিছু শিখে ফেলেছি, কিন্তু কপালে নাই, তাই টাকাটা পেলাম না। তাই আমি চাই নতুন যারা ট্রেড শুরু করেছে তারা যেন জানে শেয়ারবাজারের ভুলগুলো কি কি? তাহলে শুরুতে ক্ষতির সম্ভাবনা কম থাকে। পরামর্শ থাকে কেন ক্ষতি হলো তা যেন চিন্তা করে। যখন আপনি ক্ষতি কেন হলো তা চিন্তা করে বাহির করতে পাড়বেন পরের ট্রেডে হতে লাভ হতে শুরু করবেন। সব ধরনের প্রিপারেশন নিয়ে নিজেকে তৈরি করে  তারপর মার্কেটে আসেন। ফাইনাল পরীক্ষার ঠিক আগের রাতে পড়লেই হবে না। সারা বছর ধরে পড়া মুখস্ত করতে হবে, বার বার অনুশীলন করে নিজেকে তৈরি রাখতে হবে, আবেগকে জায়গা না দিয়ে যুক্তিতে চিন্তা করবেন তখনই বুঝতে পারবেন এত সহজে টাকা ডাবল করা সম্ভব না। যারাই এক অল্পসময়ে টাকা ডাবল করে দেওয়ার গল্প শুনাবে বুঝে নিবেন তারা আপনাকে মারতে চাইছে, আপনাকে শেয়ার বাজার থেকে তাড়িয়ে দিতে চাইছে। তাদের কথা শুনে বহুলোক এখান থেকে চলে গেছে। আর আপনাকেও একদিন চলে যেতে হবে। তারা নিজেরাও এই করে শেষ হচ্ছে আপনাকেও শেষ করে দিবে। আবার বলি, আপনি এখানে নতুন তাই আপনার বিনিয়োগ স্লো এন্ড স্টেডি করতে হবে নতুবা আপনার সকল পুঁজি খুব দ্রুতই শেষ হবে।
ট্রেডিং করা মানে ফিলিস্তিনি আর ইজরাইলের মত যুদ্ধ করা,বাংলাদেশ আর পাকিস্তানের মত যুদ্ধ করা ।বড় বড় ইনসষ্টিটিউশন ,বড় ,বড় প্রতিষ্ঠিত বিনিয়োগকারী এখানে বিনিয়োগ করছে ,তারাও প্রফিট করার জন্য লড়াই করছে,তাই অপনার প্রথম যুদ্ধ টাকা বাচানো। দ্বিতীয় যুদ্ধ আবেগ নিয়ন্ত্রণ, তৃতীয় যুদ্ধ হলো লাভ করার।  টাকা শেষ মানেই যুদ্ধের মাঠ থেকে অর্থিকভাবে মৃত হয়ে বিদায় হয়ে গেলেন, একজন মৃত সৈনিক শহীদ হিসাবে সম্মানের খাতায় থাকলেও আপনার পরিচয় একজন পরাজিত সৈনিক হিসাবে ইতিহাসের পাতায় থাকবে।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ভাল কোম্পানি কত পার্সেন্ট ডিভিডেন্ড দিলে লাভ হবে?

লং ট্রাম বিনিয়োগকারীরা ভাল শেয়ার চেনার জন্য, কোম্পানীর ডেভিডেন্ড ইল্ড দেখে থাকেন।যে সমস্ত শেয়ারের  ডেভিডেন্ড ইল্ড ভাল সেই সব শেয়ার লং ট্রাম বিনিয়োগকারীদের জন্য বেশি আকর্ষণীয় হয়ে থাকে।তাই আজকে আমরা  ডেভিডেন্ড   কি ? এবং  কত টাকায় কত পার্সেন্ট ডেভিডেন্ড দিলে ভাল হবে ,অর্থ্যাথ  ডেভিডেন্ড ইল্ড বাহির করার মাধ্যমে কি ভাবে ভাল শেয়ার চিনা যায়, তাই নিয়ে আলোচনা করব। ডিভিডেন্ড ( Dividend ) অর্থ লভ্যাংশ। একটি কোম্পানির তার মুনাফার যে অংশ শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে বিতরণ করে থাকে তা-ই লভ্যাংশ বা ডিভিডেন্ড। কখনো কখনো রিজার্ভ বা সংরক্ষিত তহবিল থেকেও লভ্যাংশ বিতরণ করা হয়। লভ্যাংশ নগদ টাকা বা স্টক (শেয়ার) অথবা উভয় আকারে হতে পারে। লভ্যাংশ সাধারণত শতাংশের হিসাবে প্রকাশ করা হয়। ডিভিডেন্ড সব সময় প্রদান করা হয় ফেস ভ্যালুর উপর ভিত্তি করে। যেমন ১০% ডিভিডেন্ড দিলে প্রতি শেয়ারে ডিভিডেন্ড হবে ১ টাকা। কারন ফেস ভ্যালু ১০ টাকা এবং ১০ টাকার ১০% হচ্ছে ১ টাকা। যদিও শেয়ারের ফেস ভ্যালু ১০ টাকা কিন্তু মার্কেটে শেয়ারের দাম ১০ টাকার থেকে বেশি বা কম হতে পারে। ধরা যাক ১০% হারে ডিভিডেন্ড দেওয়া কোম্পানি...

ক্যান্ডেলষ্টিক এর উৎপত্তির ঘটনা ও এর পিছনের সাইকোলজি

   মুনিসিহা হোমা [Munehisa Homma] ইতিহাসের সবচেয়ে সফল প্রাইজ একশন ট্রেডার।লোক্মুখে প্রচলিত আছে ,তিনি ট্রেডিংএর মাধ্যমে  ১০ বিলিয়ন ডলার আয় করেছিলেন। এখন মনে প্রশ্ন আসতেই পারে কে এই  মুনিসিহা হোমা [Munehisa Homma]? তিনি জাপানের সাকাতা ইয়ামাগাতার একজন কৃষক,একজন কৃষক তার ধানের বাজার দর ওঠা নামা ধরার জন্য ক্যান্ডলষ্টিক আবিষ্কার করে। টেকনিক্যাল এনালাইসিসের তিনি পথদ্রষ্টা। আজকের এই আর্টিকেল এই ক্যান্ডালষ্টিক এবং ক্যান্ডেলষ্টিক এর সাইকোলজি নিয়ে আলোচনা করা হবে। যাদের ষ্টোক মার্কেট নিয়ে আগ্রহ আছে তারা সবাই কম বেশি ক্যান্ডেলষ্টিক নিয়ে ধারণা রাখে। তাই আমরা একটু ভিন্ন ভাবে শুরু করব ,প্রথমে চিন্তা করব কি প্রেক্ষাপটে এবং কি সমস্যায় ক্যান্ডেলষ্টিক আবিষ্কার করতে হয়ে ছিল। কি তার সাইকোলজি এবং এর রহস্য ,ভেদ করা হবে এখানে। আজ থেকে প্রায় ৪০০ বছর আগে ধরি ,মুনিসিহা তার ধান বিক্রি করার জন্য রওনা হল এখন যেহেতু ৪০০ বছর আগের ঘটনা তাই কোন যান্ত্রিক যানবাহন আশা করা যায় না,ধরলাম গাধার পিঠে করে ধানের বস্তা নিয়ে যাচ্ছে। যেহেতু গাধার পিঠে ধানের বস্তা নিয়ে যাচ্ছে তাই সঠিক সময়ে গন্তব্যে আসা সম্ভব হ...

ক্যান্ডেলষ্টিক কিভাবে কাজ করে ?

আমরা অনলাইনে চ্যাট করার সময় কম বেশি সকলেই ইমোজি ব্যবহার করে থাকি ,এই সব ইমোজি কোন ভাষা নয়, কিন্তু তার পর ও প্রতিটি ইমোজির ভিন্ন ভিন্ন  অর্থ আছে। ঠিক তেমনি ভাবে ক্যান্ডেলষ্টিক আপাত দৃষ্টিতে দেখতে সরলরেখা আকৃতির চিহ্ন হয়ে থাকলে, এই গুলো ঠিক ইমোজির মত অর্থ পূর্ণ সংকেত প্রদান করে থাকে। ক্যান্ডেলষ্টিক হচ্ছে মার্কেটের স্মাইলি, মার্কেট যদি আপনার সাথে সম্পর্ক স্থাপন করতে চায় ,তাহলে তা ক্যান্ডেলষ্টিক এর মাধ্যমেই তা  করা সম্ভব হবে।  উদাহরণ হিসাবে বলা যায় ,ধরুন আপনি আপনার বন্ধুর কাছে  চ্যাটে এক হাজার টাকা ধার চাইলেন, উত্তরে আপনার বন্ধু 👍😀 এই ইমো দিয়ে পাঠাল তাহলে আপনি পজেটিভ হিসাবে ধরে নিবেন।ঠিক একই ক্ষেত্রে যদি 👿 এই ইমো দিত তাহলে বুঝতেন কোন না কোন ঝামেলা আছে। বন্ধু টাকা দিতে রাজি না।  ঠিক এই রকমই ক্যান্ডেলষ্টিক ও পজেটিভ হয়ে থাকে আবার আনুরূপ ভাবে নেগেটিভও হয়ে থাকে, যে ভাবে আমরা ইমো দেখে আমরা মানুষের অনুভূতি বুঝতে পারি ,ঠিক তেমনি আমরা যদি আমাদের চোখকে ঠিকমত ট্রেইন করতে পারি তাহলে আমরা ক্যান্ডেলষ্টিক দেখেও মার্কেট কেমন হবে অনুধাবন করতে পারব। ক্যান্ডেলষ্টিক আপনাকে বিহাইন্ড ...