সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ভাল কোম্পানি কত পার্সেন্ট ডিভিডেন্ড দিলে লাভ হবে?

লং ট্রাম বিনিয়োগকারীরা ভাল শেয়ার চেনার জন্য, কোম্পানীর ডেভিডেন্ড ইল্ড দেখে থাকেন।যে সমস্ত শেয়ারের ডেভিডেন্ড ইল্ড ভাল সেই সব শেয়ার লং ট্রাম বিনিয়োগকারীদের জন্য বেশি আকর্ষণীয় হয়ে থাকে।তাই আজকে আমরা ডেভিডেন্ড   কি ? এবং কত টাকায় কত পার্সেন্ট ডেভিডেন্ড দিলে ভাল হবে ,অর্থ্যাথ ডেভিডেন্ড ইল্ড বাহির করার মাধ্যমে কি ভাবে ভাল শেয়ার চিনা যায়, তাই নিয়ে আলোচনা করব।



ডিভিডেন্ড (Dividend) অর্থ লভ্যাংশ। একটি কোম্পানির তার মুনাফার যে অংশ শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে বিতরণ করে থাকে তা-ই লভ্যাংশ বা ডিভিডেন্ড। কখনো কখনো রিজার্ভ বা সংরক্ষিত তহবিল থেকেও লভ্যাংশ বিতরণ করা হয়। লভ্যাংশ নগদ টাকা বা স্টক (শেয়ার) অথবা উভয় আকারে হতে পারে। লভ্যাংশ সাধারণত শতাংশের হিসাবে প্রকাশ করা হয়।


ডিভিডেন্ড সব সময় প্রদান করা হয় ফেস ভ্যালুর উপর ভিত্তি করে। যেমন ১০% ডিভিডেন্ড দিলে প্রতি শেয়ারে ডিভিডেন্ড হবে ১ টাকা। কারন ফেস ভ্যালু ১০ টাকা এবং ১০ টাকার ১০% হচ্ছে ১ টাকা। যদিও শেয়ারের ফেস ভ্যালু ১০ টাকা কিন্তু মার্কেটে শেয়ারের দাম ১০ টাকার থেকে বেশি বা কম হতে পারে।

ধরা যাক ১০% হারে ডিভিডেন্ড দেওয়া কোম্পানিটির শেয়ারের মার্কেট প্রাইস ২০ টাকা। তাহলে এই শেয়ারের ডিভিডেন্ড থেকে প্রকৃত রিটার্ন হচ্ছে (১/২০)*১০০ = ৫%। এই ধারনাটি কে Finance এর ভাষায় Dividend Yield বলা হয়। Dividend Yield = (Dividend Per Share/Market Price of the Share)*100।



Dividend yield কি?


কেন বিনিয়োগের ক্ষেত্রে dividend yield ratio দেখবেন? এবং আপনার বিনিয়োগ করা স্টকটি আপনাকে কেমন লাভ দিতে পারে?


Dividend yield হলো লভ্যাংশের উৎপাদন বা ফলন বা লভ্যাংশ প্রকাশ করা। আর dividend yield ratio হচ্ছে কোনো শেয়ারের বর্তমান দামের তুলনায় কম্পানির বাৎসরিক লভ্যাংশ কেমন দিবে বা অনুপাত (ratio).

আপনি আজকে শেয়ারটি যে দামে কিনবেন বা কিনছেন সে শেয়ারটি আজকের এই দামে কেমন ডিভিডেন্ড আসে বা দিচ্ছে বা দিবে, সেইটা বের করার সূত্র বা রেশিও হচ্ছে Dividend yield।

কম্পানি তার লাভের কিছু অংশ শেয়ারহোল্ডারদের দিয়ে থাকে একেই আমরা dividend বলে থাকি। এই ডিভিডেন্ড তার ব্যবসায়ের প্রয়োজনে দিতেও পারে, না-ও দিতে পারে, আবার প্রতি বছর লাগাতার দিতে পারে আবার মাঝে না-ও দিতে পারে। এই ডিসিশন একমাত্র বোর্ডের ডাইরেক্টরদের উপর নির্ভর করে।

আমাদের বাজারে শেয়ারের ফেইস ভ্যালু হচ্ছে ১০ টাকা। আর এই ফেইস ভ্যালুর উপর প্রতিটি কম্পানি লভ্যাংশ ঘোষণা করে থাকে।
#ধরে নেই কোনো এক কম্পানির নাম AAC
যার মার্কেট price =৪৬৬৳
ফেইস ভ্যালু হচ্ছে =১০৳
সে ৩০% লভ্যাংশ (dividend)দিয়েছিল।
তাহলে ১০ টাকা ফেইস ভ্যালু উপর লভ্যাংশ কত টাকা হয় আমরা বের করি ↓।
৩০(লভ্যাংশ)÷১০০( শতকরা%) ×১০(ফেইস ভ্যালু)
=৩৳। তারমানে ১০ টাকায় ৩ টাকা দিয়েছে বা একটি শেয়ারে ৩ টাকা দিচ্ছে।
#আসেন এবার Dividend yield (লভ্যাংশের উৎপাদন) নিয়ে আমরা বুঝি।
কম্পানি তার শেয়ারের বর্তমান মার্কেট দামে কেমন পরিমাণ ডিভিডেন্ড দিচ্ছে Dividend yield ratio দারা আমরা বুঝতে পারি।
আগে আমরা Dividend yield (লভ্যাংশের ফলন বা উৎপাদন) এর সূত্রটি দেখেনি ↓
Dividend Yield (লভ্যাংশের ফলন বা উৎপাদন)(বার্ষিক লভ্যাংশ ÷ বর্তমান স্টক মূল্য)
শতকরা হারে হয়ঃ
(বার্ষিক লভ্যাংশ ÷ বর্তমান স্টক মূল্য)×১০০
এবার দুটি স্টক নিয়ে বিশ্লেষণ করিঃ
১. AAC
* সর্বশেষ ৩০% ডিভিডেন্ড দিয়েছে।
*একটি শেয়ারের দাম বাজার মূল্য ৪৬৬ টাকা।
(৩০÷৪৬৬)×১০০=৬%
এখন আপনি যদি AAC তে ইনভেস্ট করেন তাহলে বাজার মূল্যের সাথে dividend yield হিসাব করলে দেখবেন ৬% হয়। কোম্পানির তার লাস্ট ডিভিডেন্ড দেওয়ার সাথে অনেক ডিফারেন্স মানে কম। তাহলে কিভাবে বেশি দিচ্ছে? কারণ কম্পানি তার রিজার্ভ থেকে নিয়ে ডিভিডেন্ড ৩০% দিচ্ছে। আগামীতে ইচ্ছা করলে এই কম্পানি আপনাকে ৬% বা ডিভিডেন্ড না-ও দিতে পারে, যদি নতুন কোনো প্রজেক্ট নিয়ে থাকে।

২. EHL
* সর্বশেষ ২৫% ডিভিডেন্ড দিয়েছে।
* একটি শেয়ারের বাজার মূল্য ৫৩.২০ টাকা।
(২৫÷৫৩.২০)÷১০০=৪৭%
এখন আপনি যদি EHL এ ইনভেস্ট করেন তাহলে বাজার মূল্যের সাথে dividend yield হিসাব করলে দেখবেন ৪৭% হয়। তার মানে কম্পানির লাস্ট ডিভিডেন্ড থেকে বেশি বা বেশি দিতে পারবে।আবার এর চেয়ে বেশি দিতে পারবে রিজার্ভ থেকে, যদি নতুন কোনো প্রজেক্ট না নেয়।
Dividend yield বিনিয়োগকারীদের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ, কারন আপনি হয়তো চাইবেন একটি ভালো মৌলভিত্তিক কম্পানি শেয়ার কিনত যার প্রতি বছর eps বাড়বে এবং এর সাথে ভালো ডিভিডেন্ড দিবে আর তার সাথে শেয়ারের দামও বাড়বে।
*dividend yield এর সাথে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে কম্পানির eps বাড়ছে কিনা।
* আবার অনেক কম্পানি eps ধারাবাহিক ভাবে ভলো করতে থাকে কিন্তুু dividend yield এর সাথে মিলে আসে না ডিভিডেন্ড কম দিয়ে থাকে এতে মনে করতে হবে কম্পানি হয়তো তার লোন রিকভারির জন্যে বা নতুন কোনো প্রজেক্ট এরজন্য ডিভিডেন্ড কম দিয়েছে। এতে অবশ্যই মনে করবেন সামনে অনেক ভালো একটা ডিভিডেন্ড পাবেন এবং কম্পানি ভালো পারফর্মেন্স এর রেজাল্ট দিবে।
* বাজার খারাপ থাকলে অনেক মৌলভিত্তিক বা ফান্ডামেন্টাল এর শেয়ারের দাম কমে যায় তখন কিন্তু dividend yield ও বেড়ে যায় এটাই স্বাভাবিক আর তখনই বিনিয়োগ করার সুবর্ন সুযোগ। ধন্যবাদ। বুঝার জন্য দুই তিন বার পড়ুন।




সাধারন ভাবে, যেই কোম্পানির ডিভিডেন্ড ইল্ড বেশি সেই কোম্পানি বিনিয়োগের জন্য তত বেশি উপযোগী।





তবে ডিভিডেন্ড ইল্ড কম হলে যে সব সময় খারাপ সেই রকমও নয়। উদাহরণস্বরূপ, ধরা যাক ২ টা কোম্পানি A এবং B। ২ টা কোম্পানির শেয়ারেরই ২০২১  সালের জানুয়ারিতে বাজারমূল্য ছিল ২০ টাকা। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে এসে(বছর শেষে) ২ টা কোম্পানিই ১০% ডিভিডেন্ড দিল। তার মানে ২ টা কোম্পানির শেয়ারহোল্ডাররা শেয়ার প্রতি ১ টাকা ডিভিডেন্ড পাবে। ২০২১ এর শেষে এসে A কোম্পানির বাজারমূল্য ২০ টাকাই থাকল কিন্তু B কোম্পানির বাজারমূল্য ২৫ টাকা হল। এমন পরিস্থিতিতে ২ টা কোম্পানির ডিভিডেন্ড ইল্ড হবে:

Dividend Yield – Company A= (১/২০)*১০০ = ৫%

Dividend Yield – Company B = (১/২৫)*১০০ = ৪%


 ডিভিডেন্ড ইল্ড দেখে আপাতত মনে হতে পারে কোম্পানি A বেশি রিটার্ন দিয়েছে। কিন্তু আসলে কোম্পানি B বেশি রিটার্ন দিয়েছে। কারন কোম্পানি A এর শেয়ার হোল্ডাররা এক বছরে ২০ টাকা বিনিয়োগ করে ১ টাকা ডিভিডেন্ড পেয়েছে। কিন্তু কোম্পানি B এর শেয়ার হোল্ডাররা এক বছরে ২০ টাকা বিনিয়োগ করে ১ টাকা ডিভিডেন্ড পেয়েছে এবং তার সাথে শেয়ারের মুল্য ৫ টাকা বেড়েছে।

তার মানে কোম্পানি B এর শেয়ার হোল্ডাররা এক বছরে ২০ টাকা বিনিয়োগ করে ৬ টাকা লাভ পেল। সুতরাং কোম্পানির A এর শেয়ার হোল্ডারদের প্রকৃত রিটার্ন ৫% হলেও কোম্পানি B এর শেয়ার হোল্ডারদের প্রকৃত রিটার্ন (৬/২০)*১০০ = ৩০%।

তবে যারা বেশি ডিভিডেন্ড পছন্দ করে তারা সেই সকল কোম্পানিতে বিনিয়োগ করতে পারে যাদের ডিভিডেন্ড ইল্ড বেশি।





মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ক্যান্ডেলষ্টিক এর উৎপত্তির ঘটনা ও এর পিছনের সাইকোলজি

   মুনিসিহা হোমা [Munehisa Homma] ইতিহাসের সবচেয়ে সফল প্রাইজ একশন ট্রেডার।লোক্মুখে প্রচলিত আছে ,তিনি ট্রেডিংএর মাধ্যমে  ১০ বিলিয়ন ডলার আয় করেছিলেন। এখন মনে প্রশ্ন আসতেই পারে কে এই  মুনিসিহা হোমা [Munehisa Homma]? তিনি জাপানের সাকাতা ইয়ামাগাতার একজন কৃষক,একজন কৃষক তার ধানের বাজার দর ওঠা নামা ধরার জন্য ক্যান্ডলষ্টিক আবিষ্কার করে। টেকনিক্যাল এনালাইসিসের তিনি পথদ্রষ্টা। আজকের এই আর্টিকেল এই ক্যান্ডালষ্টিক এবং ক্যান্ডেলষ্টিক এর সাইকোলজি নিয়ে আলোচনা করা হবে। যাদের ষ্টোক মার্কেট নিয়ে আগ্রহ আছে তারা সবাই কম বেশি ক্যান্ডেলষ্টিক নিয়ে ধারণা রাখে। তাই আমরা একটু ভিন্ন ভাবে শুরু করব ,প্রথমে চিন্তা করব কি প্রেক্ষাপটে এবং কি সমস্যায় ক্যান্ডেলষ্টিক আবিষ্কার করতে হয়ে ছিল। কি তার সাইকোলজি এবং এর রহস্য ,ভেদ করা হবে এখানে। আজ থেকে প্রায় ৪০০ বছর আগে ধরি ,মুনিসিহা তার ধান বিক্রি করার জন্য রওনা হল এখন যেহেতু ৪০০ বছর আগের ঘটনা তাই কোন যান্ত্রিক যানবাহন আশা করা যায় না,ধরলাম গাধার পিঠে করে ধানের বস্তা নিয়ে যাচ্ছে। যেহেতু গাধার পিঠে ধানের বস্তা নিয়ে যাচ্ছে তাই সঠিক সময়ে গন্তব্যে আসা সম্ভব হ...

বাংলাদেশ শেয়ার বাজারের বর্তমান ও ভবিষ্যত ! সামনে কি অপেক্ষা করছে?

বাংলাদেশের ইতিহাসের স্বরণকালে এত দীর্ঘ সময় পুজিবাজার বন্ধের দৃষ্টান্ত নজিরবিহীন।ফ্লোর প্রাইজের মাধ্যমে কৃত্তিম ভাবে সাপোর্ট দেওয়া হয়েছে বাজারকে,বিগত আট বছরের মধ্যে সর্বনিন্ম ইনডেক্স ।বোঝায় যাচ্ছে কেমন যাচ্ছে বাংলাদেশের শেয়ার মার্কেট, ক্ষুদ্রবিনিয়োগকারীরা এক কঠিন সময়ের ভিতর দিয়ে যাচ্ছে।তাই বিনিয়োগকারীদের সবার মনে এক প্রশ্ন, সামনে কি অপেক্ষা করছেতাই আজকের আলোচনা বাংলাদেশের শেয়ারবাজারের বর্তমান ও ভবিষ্যত। অন্যান্য সকল প্রতিষ্ঠানের মত পুজিবাজারকেও সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য খুলে দেওয়া উচিত। পৃথিবীর করোনা আক্রান্ত সব দেশে পুজিবাজার খোলা থাকলেও আমাদের দেশে বন্ধ, পুজিবাজার এখন চালু করলে এর নেগেটিভ দিক হচ্ছে করোনা মহামারীর সময় বিনিয়োগকারীরা আত্নবিশ্বাসী হয়ে উঠতে পারবে না,তাই ফ্লোর প্রাইজ ঠিক করা থাকায় শেয়ারের দাম না কমলেও বায়ার লেস থাকতে হবে, আর পজেটিভ দিক হচ্ছে করোনা মোকাবেলার পর মার্কেট ওপেন হলে দীর্ঘ সময় পর আবার চালু হওয়ায় পুজিবাজারে একটা চাঙ্গা ভাব লক্ষ্য করা যেতে পারে।  এখন আলোচনা করা যাক পুজিবাজারের ভবিষ্যত নিয়ে।  সরকারের বিভিন্ন সিদ্ধান্ত এখানে খুব দ্রুত প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন...